সরকার হস্তক্ষেপ করলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হতেন : কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আদালত, আইন সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না। খালেদা জিয়াকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, আদালতকে জিজ্ঞাসা করুন। সরকার যদি হস্তক্ষেপ করত, তাহলে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করানো হতো।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বারবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। এর আগে আজ শুক্রবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী সংগঠনগুলোর যৌথসভায় অংশ নেন তিনি।
লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্ট দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বারবার তাঁর স্থায়ী জামিনের আবেদন জানালেও আদালত তা নাকচ করে দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবারও এক মামলায় রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হরতাল চলাকালে নিরাপত্তার কারণে তিনি সকালে আদালতে যেতে পারেননি। পরে তাঁর আইনজীবীরা দুপুরের পর আদালতে হাজির হওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু বিচারক সময়মতো আদালতে হাজির না হওয়ায় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকাবস্থায়ও একই আদালত দুই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। দেশে ফিরে পরপরই তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন এবং নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যেই আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন ৬ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইবেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে ‘বিস্ময়কর’ করে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতারা। দেশের নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, এ কারণেই বিচারকরা আজ আর ‘নিজেদের ইচ্ছামতো’ আদেশ দিতে পারছেন না।
তবে বিএনপি নেতাদের এই ধরনের প্রতিক্রিয়া ‘হাস্যকর’ বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তাঁরা (বিএনপির নেতারা) প্রতিক্রিয়া দিলেন সরকার নাকি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। বিএনপি তো আইন-আদালত মানে না; তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলেই বলা হচ্ছে আদালতে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এটার প্রমাণ দিয়েছেন তাঁরা আদালতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ দিয়ে।’
‘রাজনীতি করলে কি আইন মানবেন না? তাঁরই তো নিয়ন্ত্রিত ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন মামলা করেছেন। তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, এই সরকারই মামলা করেছে।’
সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আদালত যখন ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেন, তখন আদালত স্বাধীন। আদালত যখন খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে বের করে দিলেন, তখনই বলা হয়, আদালতে হস্তক্ষেপ করছে সরকার। এখন সেই বাড়িতে সেনাবাহিনীর ৫০২ জন কর্মকর্তা বাস করছেন। এটা কি সরকারের দোষ?’
বিএনপি গত সাড়ে আট বছরে সাড়ে আট মিনিটও আন্দোলন করতে পারেনি দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যদি তাঁরা কোনো প্রকারে দেশে অশান্তি করতে চায়, তাহলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
জনগণ এখন আর বিএনপিকে চায় না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখন ভাবছে কীভাবে এই সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনবে। কারণ, আওয়ামী লীগের অনেক উন্নয়ন সফলতা আছে। আর বিএনপির কিছুই নেই।
আগাম জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো প্রধানমন্ত্রী জানেন। আর সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি নির্বাচনে জন্য। আগামী মাসেও যদি হয় আমরা প্রস্তুত।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে শোক জানানো হয় ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।

Comments