দীর্ঘদিন ধরেই খসে পড়ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাদের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনকে বারবার জানানোর পরও এ সমস্যার কোনো প্রতিকার হয়নি। উল্টো দায় অস্বীকার করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কা মাথায় নিয়ে হলটিতে বসবাস করতে হচ্ছে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েক বছর আগ থেকেই পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনা ঘটলেও কিছুদিন ধরে এর হার বেড়েছে। আগে পলেস্তারার ছোট ছোট টুকরা খসে পড়লেও এক মাস ধরে বেশ বড় বড় টুকরো খসে পড়ার ঘটনা ঘটছে। এগুলো কারো শরীরের ওপর পড়লে গুরুতর জখম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার সকালে হলের ‘এ’ ব্লকের বারান্দায় ছাদের কয়েকটি বড় বড় টুকরা খসে পড়ে।
ইউসুফ জামিল নামের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিন বছর ধরেই এ রকম হতে দেখছি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটা অনেক বেড়ে গেছে। হল প্রশাসনকে বারবার বলেও কোনো লাভ হয়নি। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি আমরা। যে কোনো মুহূর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসন সম্ভবত দুর্ঘটনা ঘটার অপেক্ষাতেই রয়েছে।’
এদিকে এ সমস্যার সমাধান না হওয়ার জন্য একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস।
হল প্রশাসনের দাবি, বারবার জানানোর পরও প্রকৌশল অফিস এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আর প্রকৌশল অফিস বলছে, হল প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতে পারেনি বলেই এ ব্যাপারে কোনো সুরাহা করা যায়নি।
জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক বলেন, ‘ভবনের ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ার বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে পুরাতন হল হওয়ার কারণে এরকম ঘটনা ঘটেছে। প্রকৌশল অফিসকে এ নিয়ে তিন-চারবার জানিয়েছি। তাদেরকে এনে দেখিয়েছি। মাসখানেক আগে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, মুখে বলেছি। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমি জানি, আমার আগের প্রভোস্টও এটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছেন। এখন প্রকৌশল অফিস যদি পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এসব কাজ তো আমি করতে পারি না।’
অধ্যাপক তারেক আরো বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমি একজন প্রকৌশলীকে সেখানে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করিয়েছি। তারা আমাকে জানায় দেয়ালে ফাটল দেখা দিলে সেটা সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু ছাদের প্লাস্টার খসে পড়লে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।’
তবে দায় অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আবদুস সালাম মো. শরীফ বলেন, ‘আমাদের তো অঢেল টাকা নেই। এ ব্যাপারে তো প্রভোস্টকে সিরিয়াস হতে হবে। হল প্রশাসন যেটাকে প্রায়োরিটি দেবে, সেটাই হবে। সীমিত সম্পদের যদি অসংখ্য চাহিদা থাকে, বারবার বলতে হবে। ভাইস চ্যান্সেলরকে বোঝাতে হবে। আগের প্রভোস্ট তো লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছে। বাথরুমে খরচ করছে। ভালো জায়গাও ভেঙে প্লাস্টার করছে। বলছি যে, এটা প্লাস্টার ফেলার দরকার নাই, ছাদ করেন। সে করে নাই, তার বাথরুম ঠিক করতে হবে। এভাবে পয়সা খরচ করছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়।’
হল প্রভোস্টের চিঠির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. শরীফ বলেন, ‘আমার এখন জানা নাই, দেখতে হবে। এটা তো মুখস্থ নাই। হইতে পারে। ফান্ড নাই, তাই হয় নাই। একটা চিঠি দিয়ে তো বসে থাকলে হবে না। অরুণাপল্লী থেকে প্রভোস্টগিরি করবেন। আপনি প্রায়োরিটি ভালোভাবে দেবেন না। আইসা এক ঘণ্টা থাইকা চইলা যাবেন। একটা চিঠি দিয়ে বলবেন আমি চিঠি দিছি এক মাস আগে। এটা তো হয় না।’
তবে প্রকৌশল অফিস কোনো ফান্ড চেয়েছে কি না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক বলেন, ‘এ রকম কোনো ফাইল এসেছে বলে আমার মনে পড়ে না। অফিস সময়ে জানতে হবে।’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ দেওয়া বাসভবনে না থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী অরুণাপল্লীতে নিজের ব্যক্তিগত বাসায় বাস করছেন। প্রাধ্যক্ষদের বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত বাসায় থাকার নিয়ম রয়েছে। তবে অধ্যাপক তারেকের দাবি, তাঁকে বাসাটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি এবং নির্ধারিত বাসাটি বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় তিনি সেখানে থাকছেন না। বাসাটি সংস্কার করার জন্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন তিনি।
এসব বিষয়ে অবহিত করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘আমি এদের সাথে কথা বলব। প্রভোস্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন উভয়ের সাথেই। কথা বলে তাড়াতাড়ি ঠিক করার ব্যবস্থা নিতে বলব।’
Comments
Post a Comment